রাজা মাঝির বয়স ৮৬। ৫১ বছর কেটেছে খেয়া নৌকা বেয়ে। শরীর জুড়ে বার্ধক্যের ছাপ ফুটে উঠেছে। তবু শক্ত হাতে বৈঠা ধরে এখনো মানুষ পারাপাড়ের কাজটি করছেন তিনি। কারণ খেয়া নৌকার বৈঠা বেয়েই চলে তার জীবন-জীবীকা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, রাজামাঝি ধন সম্পদে রাজা না হলেও খেয়াঘাটের রাজা তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পারাপার, তাঁদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগীতায় অবদান রয়েছে তার। তাছাড়া রোদ, বৃষ্টি- ঝড়ের সময় অপেক্ষমান যাত্রীদের পারাপারের দক্ষ নাবিক এই রাজামাঝি।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ৪ নম্বর মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বাড়ি সংলগ্ন গুমানী নদীতে খেয়া নৌকায় মানুষ পারাপাড়ের কাজটি করছেন রাজা মাঝি। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে মো. রাজা উল্লা মন্ডল (জন্ম তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২) উল্লেখ রয়েছে। তবে রাজা মাঝি হিসেবেই তার পরিচিতি।
গত বৃহষ্পতিবার গিয়ে দেখাগেছে, উদোম শরীর। চামড়ায় বার্ধক্যের ভাঁজ পড়েছে। মাথায় সাদা কাপড় জড়িয়ে শক্ত হাতে বৈঠা বেয়ে খেয়া নৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন। নৌকায় ৮-১০জন যাত্রী রয়েছেন। নদীর পানিতে ভাটির টান, প্রচন্ড স্রোত উপেক্ষা করেই পারাপারের কাজটি করছেন তিনি। শরীরে শক্তি, চোখের দৃষ্টি ঠিক থাকলেও কথা বলতে পারেন না তিনি। আধাভাঙা কথায় শুধুই বলেন ' পারাপারে ১০ ট্যাকা'। নৌকার যাত্রী আবিদ মুন্সি ও রায়হান প্রামানিক বলেন,পাঁচ দশক ধরে মানুষ পারাপারের কাজ করছেন তিনি। এলাকার সব মানুষকেই কম বেশি চেনেন তিনি। গ্রামের সকল বাড়ি থেকেই মাসোয়ারা পান। অপরিচিত মানুষ হলে পারাপারের জন্য ১০ টাকা করে নেন তিনি। কেউ ঠকায়না তাকে। স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আবু শামা মন্ডল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পারাপারে অবদান রয়েছে এই মানুষটির। দেশ স্বাধীন হলেও রাজামাঝির ভাগ্য বদলেনি। জীবন-জীবিকা আর নদী -নৌকার মায়ায় এখনো বৈঠা হাতে নৌকা পারাপার করে চলছেন তিনি। বড়ই সহজ-সরল মানুষ তিনি। খেয়াঘাটটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজারা নিয়েছেন তিনি। মানুষ পারাপার করে প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। তাছাড়া গ্রামের মানুষের কাছ থেকে বছরচুক্তিতে ফসলও তোলা হয়। এ আয়ের টাকায় বাবা-মায়ের জন্য একটি টিনের ঘর করে দেওয়া হয়েছে। এখন সুখেই কাটছে তাদের দিন।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।