জনতার মত
বাংলা ভাষার সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে
মো. শাহারিয়ার
বাংলাদেশ আমার, মা আমার বাঙালি। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে এ বাংলা ভাষা সংরক্ষণে। তাদের জানাতে হবে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার কথা, ভাষা সৈনিকদের কথা, শহীদ মিনারের কথা, বাংলা ভাষার কথা, বাংলাদেশি বাঙালির কথা। নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কি? কেন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো?
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন। এই দিন আমাদের জাতীয় পর্যায়ের 'শহীদ দিবস' থেকে আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের 'মাতৃভাষা দিবস। বাংলার বসন্তের ফাগুন মাসের এই দিনে রফিক, জব্বার, বরকত, সালামের রক্তে শিমুল-পলাশ ফুল আরো লাল হয়ে উঠেছিল। বাংলার আকাশ বাতাসও যেন বাংলা ভাষার দাবি আদায়ে স্বোচ্চার হয়ে উঠেছিল। আর সুকণ্ঠী পাখি কোকিল গান ছেড়ে আর্তনাদ করে উঠেছিল ভাষার দাবিতে। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা, তথা জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জীবন দেয়ার ঘটনা আমাদের ইতিহাসে লাল রঙে লেখা থাকবে।
বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩টি দেশসহ অন্যান্য দেশও মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। এই ভাষায় মাসে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ভরে ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও ভাষা সৈনিকদের অবদানকে স্মরণ করতে হবে। শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে হবে, পরম করুণাময়ের কাছে। বাংলা ভাষার তথ্য ও ভাষা সৈনিকদের জীবনের সঠিক তথ্যচিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দেয়া হোক এই প্রতাশা করি। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শোকের নয়, শক্তির ও সাহসের। কেবল বেদনা নয়, সেই সাথে প্রেরণাও ওইদিন আমরা আমাদের কয়েকজন দেশপ্রেমিক ও মহৎপ্রাণ ভাইকে হারিয়ে পেয়েছি জাতির মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে উজ্জীবিত হবার মনোবল। অমর একুশের ভাষা দিবস নিছক স্মৃতিচারণের নয়। সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে হবে।
এটা আমাদের গৌরবের, এটা আমাদের প্রত্যয় ও প্রত্যাশার। এটা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায়। আর এর প্রত্যয় হলো- 'মায়ের ভাষার মতো যা কিছু আমাদের সংস্কৃতির আপন। যা কিছু আমাদের জাতির স্বাতন্ত্র পরিচয় বহন করে। আমরা বাঙালি, বাংলাদেশি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা। তাই সবকিছুকে আমরা সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধ করবো। আর প্রত্যাশা- সোনার বাংলা সোনার মতো করে, স্বপ্নের মতো করে গড়তে, ১৯৫২ সালের মতো দেশবাসী জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হবো। সারাদেশের ভাষা সৈনিকদের কাছ থেকে নতুন ও অজানা অনেক তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয়ভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিব।
তদানীন্তন পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকেও উর্দুর সাথে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিশেষ করে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। এরপর গৌরবময় ৬৮টি বছর পেরিয়ে গেছে। রাজনৈতিক বহু পটপরিবর্তন হলেও একুশের শিক্ষা আজো আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর। একুশকে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে আবারও সদা সচেষ্ট থাকবো। বাংলা ভাষা হয়েছে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। এখানে আর রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমস্যার প্রশ্নই ওঠে না। তবু আজ প্রত্যেকে নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করেন ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কতটুকু? সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন তো নেইই, বরং অবস্থা দেখে আশঙ্কা হয়, ইংরেজি ভাষার দাপটে স্বদেশেই বাংলা ভাষার কি হবে। এসব অনেক কথা বলেছেন ভাষা সৈনিকগণ।
আমরা ভাষা শহীদদের রক্ত-ঋণ শোধ করতে এগিয়ে না এলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। ১৯৫২, একুশের পথ ধরে আমাদের নিজস্ব ধারায় এ ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটাতে হবে। জাতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে কৃষ্টির সমৃদ্ধি সাধনে প্রেরণা জোগাবে ভাষা আন্দোলন। বাংলা ভাষার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষ্টি কালচার সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আর তখনই ভাষা সংগ্রামের স্মৃতি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে। ভাষা সৈনিকদের গোটা জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে সংগ্রহ করবে ভাষার নতুন অজানা অনেক ইতিহাস। শহীদদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে গর্বিত হবে বাঙালি জাতি। একদিনের জন্য হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্মরণ করবে বাংলা ভাষার কথা, বাংলার কথা। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার কথা। ভাষা সৈনিকদের কথা। শহীদ মিনারের কথা। বাংলা ভাষার কথা। বাংলাদেশি বাঙালির কথা।
মো. শাহারিয়ার : লেখক
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।