প্রধানমন্ত্রীর দফতরে লিখিত অভিযোগ সিরাজগঞ্জ আ'লীগ নেতাকর্মীদের
স্টাফ রিপোর্টার
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা, দলের রীতি-নীতি লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলীয় প্যানেলের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের কমিটি ঘোষণার ঘটনা উল্লেখ করে একজন আইনজীবী এবং একজন সাংবাদিকের স্বাক্ষরে এ অভিযোগ দেয়া হয়।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে এতথ্য জানা গেছে। দলীয় প্রধান ছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে অভিযোগপত্রের অনুলিপি দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সাংবাদিক জাহাঙ্গীর হোসেন এবং আইনজীবী শহিদুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম তালুকদার এবং সহ সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্যসহ কয়েক জন নেতা টেন্ডারবাজ ও মাদকাসক্তদের নিয়ে বিভিন্নভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তারা অর্থ লুটসহ নানাভাবে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। গ্রুপিংয়ের কারণে সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ করে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের বিরোধিতার কারণে আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী রেজাউল করিম রাখাল পরাজিত হন। এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক জয়ী হলেও সভাপতি পদে কৌশলে প্রায় ১০০ ভোট বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে দিয়ে দেয়া হয়। একইভাবে এই প্যানেলের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট জেবুন্নেসাকেও পরাজিত করা হয়।
সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে কমিটি ঘোষণার ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবের সাধারণ সভা আহ্বান করা হলেও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নেতাদের ডেকে নিয়ে সে সভা পিছিয়ে দিতে বাধ্য করে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত থেকে সদস্যদের মতামত ছাড়াই ১৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে- যাদের একটি বড় অংশ বিএনপি-জামায়ূাত সমর্থক হিসেবে পরিচিত। প্রেসক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা বাবু ইসলাম। তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি সমর্থক হেলাল আহমেদকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। একইভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা ফেরদৌস রবিন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসরাইল হোসেন বাবুকে বাদ দিয়ে বিরোধী মতের জাকিরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। এ কারণে জেলার অধিকাংশ সাংবাদিকের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফ বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. হাবিবে মিল্লাতকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কে এম হোসেন আলী হাসানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আবদুস সামাদ তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোসেন আলী হাসান দল এবং জেলার সরকারি দফতরগুলোতে নিজের আধিপত্য বিস্তারে তৎপর হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, টেন্ডারবাজি, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে দুর্ব্যবহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন থেকে কমিশন আদায়, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ভাতার কার্ড বিতরণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা জেলার বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।