৬৭ আরোহীর মধ্যে ৩২ জনই বাংলাদেশি : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : তদন্ত কমিটি গঠিত
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) বিধ্বস্ত বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গতকাল সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ৪ ক্রুসহ ৬৭ আরোহীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যে ৩২ জনই ছিল বাংলাদেশি।
নেপাল সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৫০ জনের নিহতের তথ্য নিণ্ডিু করেছেন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে নেপালের পুলিশের মুখপাত্র মনোজ নুপেন প্রাথমিকভাবে ৪০ জনের প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ৩১ জনের
মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে নেয়ার পর আরো ৯ জন মারা গেছেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিধ্বস্ত বিমানের আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর বলেছেন, ২ ইঞ্জিনবিশিষ্ট টার্বোপ্রোপ বিমানটি ৬৭ আরোহী ও ৪ ক্রু নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। তিনি বলেন, যাত্রীদের মধ্যে ৩৭ পুরুষ, ২৭ নারী ও ২ শিশু ছিল। এদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন নেপালের নাগরিক।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক পৃথক শোক বার্তায় গতকাল সোমবার বিকেলে তারা নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করেন পাশাপাশি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
নেপালের বেসামরিক বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সানজিব গৌতম বলেন, বিমানটির পাইলটকে বিমানবন্দরের দক্ষিণ-প্রান্ত থেকে রানওয়েতে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিমানবন্দরের উত্তর অংশ থেকে বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করে পাইলট। এ সময় হঠাৎ বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। পরে বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
বিমান বিধ্বস্তের পরপরই ঘটনাস্থলে উদ্ধাকারী দল, সেনাবাহিনী ও এম্বুলেন্স পৌঁছায়। বিমাবন্দরের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানটি বিধ্বস্তের আগে আকাশে কাঁপতে শুরু করে।
নেপালের দৈনিক দ্য হিমালয় টাইমস টিআইএ’র বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অর্ধশত প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। নেপালের সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকা আশঙ্কা জানিয়েছে, বিমান দুর্ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সুরেশ আচার্য বলেছেন, বিধ্বস্ত বিমানের ভেতর থেকে ১৭ যাত্রীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে ইউএস-বাংলার এস২-এজিইউ ১২টা ৫১ মিনিটে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর জানান, অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় এটি। এদিকে নেপালে বিমান দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট তথ্য সিভিল এভিয়েশনের কাছে নেই। তবে এই দুঘর্টনা তদন্তে এরইমধ্যে কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি মঙ্গলবার নেপাল যাবে বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, নেপালের কাঠমাণ্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মোট ৪১ জন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন ২০ জন। এখন পর্যন্ত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া ৪ জনকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসক ও নার্স প্রস্তুত রয়েছেন। ওষুধ এবং একটি বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নেপাল চাইলেই যে কোনো সময় আমাদের প্রতিনিধি দল চলে যাবে।
দুর্ঘটনার পর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জানান, বিমানটি উড্ডয়নের দেড় ঘণ্টা পর আমরা দুর্ঘটনার সংবাদ পাই। ঘটনার পর থেকে ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট বন্ধ রয়েছে। এয়ারপোর্ট খুললে আমরা আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল সেখানে পাঠাব। এদিকে, নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সুরেশ আচার্য বলেছেন, বিধ্বস্ত বিমানের ভেতর থেকে ১৭ যাত্রীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নেপালের ত্রিভুবনে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের বিষয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান। এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে নিজ কার্যালয়ে তিনি এ কথা জানান। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বলেন, ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি মঙ্গলবার নেপাল যাবে। তিনি জানান, ১ জন চিকিৎসকসহ ৩ সদস্যের টিম তৈরি আছে। ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট খুলে দিলেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে কাজ শুরু করবেন। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের সাথে আমার কথা হয়েছে। যে কোনো সহযোগিতার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।