বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহৎ জংশন আখাউড়ার গুরুত্বপূর্ণ ৪টি স্থাপনা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন আরএনবি'র সদস্যরা। লোকবলের সংকটে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না আরএনবি'র সদস্যরা। অপরাধীরা যদি গুরুত্বপূর্ণ (কেপিআই) ৪টি স্থাপনায় নাশকতা করে, তাহলে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যাবে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রের অধিক গুরুত্বপূর্ণ (কেপিআই) এই স্থাপনা ৪টি হলো আখাউড়ার তিতাস রেলসেতু, লোকোশেড ইয়ার্ড, জ্বালানি মজুতের দুটি ট্যাংক ও বিদ্যুতের সাব-স্টেশন। এই ৪টি স্থাপনার কোনো একটির সামান্য ক্ষতি হলে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সরাসরি রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে করে রেল যোগাযোগে বড় ধরনে ক্ষতি হবে।
আখাউড়ায় কর্মরত রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিআই সিরাজ উদ্দিন দৈনিক জনতাকে জানান, আখাউড়ায় যে লোকবল থাকার কথা, তার প্রায় অর্ধেকই নেই। লোকবলের সংকটের কারণে তিতাস রেলসেতুর চৌকিতে কাউকে রাখা যাচ্ছে না।
কেপিআইভুক্ত ৪টি স্থপনার মধ্যে লোকোশেড ইয়ার্ড, জ্বালানি মজুতের দুটি ট্যাংক ও বিদ্যুতের সাব-স্টেশনে দিনে-রাতে তিনজন দায়িত্ব পালন করছেন। জ্বালানি মজুতের দুটি ট্যাংকের প্রত্যেকটি ৪৬ হাজার লিটার করে তেল রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের তিতাস রেলসেতুটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার অভাবে দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এই সেতুর নিরাপত্তা একেবারেই নেই। জংশন ইয়ার্ডের লোকোশেড এলাকার নিরাপত্তাও নড়বড়ে। এখানে ট্রেনচালকদের দায়িত্ব বণ্টন, ত্রুটিপূর্ণ রেলের ইঞ্জিন মেরামত করার পাশাপাশি উদ্ধারকারী দুটি ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরবরাহ (সার্ভিস) এবং অপরটি মজুত (রিজার্ভ) ট্যাংক রয়েছে। প্রতিটি ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ৪৪ হাজার ৫৬৭ লিটার। এই দুটি ট্যাংক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, আখাউড়া-ঢাকা, আখাউড়া-সিলেট, আখাউড়া-শায়েস্তাগঞ্জ-ভৈরব রেল রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল, মালবাহী, তেলবাহী ও কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। অথচ এই এলাকা পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুতে বসানো রেললাইনের নিচের কাঠের সিস্নপারের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিক সিস্নপারের অংশবিশেষ খসে পড়েছে। অনেক সিস্নপারে নাটবলটু নেই। সেতুর উপর দিয়ে চলাচল নিষেধ লেখা দুটি সাইনবোর্ড দুই প্রান্তে থাকলেও দিন-রাত মানুষ হেঁটে সেতু পার হচ্ছে। সেতুর পাশে একটি চৌকি থাকলেও কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই।
এছাড়া সেতুর দুই প্রান্তে রেললাইনের নিচের মাটি ধরে রাখার জন্য প্রায় তিন হাজার ফুট দেয়াল আছে। এর প্রায় এক হাজার ফুট দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া লোকোশেড ও তেল মজুতাগার এলাকায় কোনো নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, ৬০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০ ফুট প্রস্থের এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী ও পণ্যবাহী প্রায় ৫০টি ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন চলাচলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও সেতুটি শতভাগ উপযোগী নয়। হরতাল বা অন্য কোনো আন্দোলনের সময় নাশকতা রোধ করতে প্রকৌশল বিভাগ দিনে-রাতে সেতু পাহারার ব্যবস্থা করে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ (ঢাকা) সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে কেপিআই নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও তা কার্যকর ছিল না। আগের নীতিমালায় কিছু সংশোধনী এনে তা চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) জংশন এলাকার লোকোশেড ও জ্বালানি মজুতাগার এবং রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) রেলপথের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
আরএনবি'র পূর্বাঞ্চলের প্রধান অধিনায়ক (চিফ কমান্ড্যান্ট) ফারুক আহমেদ বলেন, আখাউড়ার লোকোশেড এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। শিগগিরই আরও লোকবল বাড়ানো হবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।