আজকাল বৈশাখ এলেই পান্তা ভাতের নামে যা খাওয়া হয়, সেটা কি আসলে পান্তা? নাকি সংস্কৃতির নামে বাঙালির আদি সংস্কৃতিকে ঠাট্টা করা!
পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে দেখা যায়, সুগন্ধি চালের ভাত রান্না করে, সেই গরম ভাতে পানি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয় নামি-দামি হোটেল-রেস্টুরেন্টে। তার সাথে থাকে ইলিশ মাছ আর গরুর মাংস। এই আয়োজন থেকে বাদ পড়ে না সাধারণ হোটেল, টিনের খুপড়ি, কাপড় টাঙানো একদিনের সব দোকানপাট। অর্থাৎ শিল্পপতি থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত অনেকেই এই প্রহসনের পান্তা খাওয়ার রেওয়াজে গা ভাসিয়ে একদিনের বাঙালি সাজে। যদি বাঙালি সংস্কৃতি পালনই করতে হয়, তাহলে ঠাট্টা নয়, প্রহসনও নয়। চলে যাও গোড়ার দিকে।
আগেকার যুগে ফ্রিজ ছিল না। রাতে খাওয়ার শেষে বেঁচে যাওয়া ভাত ফেলে না দিয়ে তাতে পানি দিয়ে রাখা হত। গরমের দিনের সেই ভাত কিছুটা পচে যেত। পরিবার ভেদে এবং সমসাপেক্ষে সেই পচে যাওয়া ভাতের সাথে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে সকালের নাস্তা হত। সেটা যে স্বাদ ছিল না তা সত্য। কিন্তু নেহায়েত ভাতগুলো নষ্ট হবে কিংবা কখনো কখনো সময় স্বল্পতার কারণেও তখনকার কৃষক পরিবারে এই রেওয়াজ ছিল।
আজকের লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, কপালে লাল টিপসহ নানা ঢংয়ের সাজ ঐ সংস্কৃতির সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সে প্রশ্নে আমি যাব না। আমার প্রশ্ন সেখানেই, এই প্রহসনের পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ আর গরুর মাংসের যে আয়োজন থাকে তার প্রতি প্লেটের দাম এক হাজার, দুই হাজার টাকা পর্যন্তও ধরা হয়। _এর সাথে কি সেই সংস্কৃতির কোনো মিল আছে?
আমরা যদি সংস্কৃতি লালন করতে চাই, তবে চলুন না গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকদের জীবনযাপন দেখে আসি। কিছু সময় কাটাই তাদের সাথে। দেখে আসি সেই সাধারণ জীবনযাপনের সাথে আজকের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কতটা মিল রয়েছে?
পুনশ্চ : আনুষ্ঠানিকভাবে বা পারিবারিকভাবে পান্তা খাওয়ার আয়োজন চলতে পারে। তবে ভেজাল পান্তা খাওয়ার পক্ষে আমি নই। গরম ভাতে পানি দিয়ে দামি ইলিশ আর গরুর মাংসের মজাদার খাবার খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি ঠাট্টা বৈকি!
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।