মহেশপুরে মনোয়ারা (প্রাঃ) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় বাড়ছে মৃত্যু
মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
গতকাল রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জিন্নানগর বাজারে অবস্থিত মনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারের কারণে রেহেনা বেগম (৩৫) নামের এক প্রসূতি মায়ের করুণ মৃত্যু হয়েছে। রেহেনা বেগম উপজেলার কাজীরবেড় ইউপির পলিয়ানপুর গ্রামের জামাত মন্ডলের ছেলে মহর আলীর স্ত্রী। জানা গেছে, গতকাল সকালে রেহেনা বেগমের সিজারের জন্য জিন্নানগর বাজারে অবস্থিত মনোয়ারা প্রাইভেট এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে তার স্বামী মহর আলী ভর্তি করেন এবং দুপুরে সোহেল রানা নামের এক ভাড়াটিয়া ডাক্তার দিয়ে সিজার করলে রেহেনার শারীরিক জ্বালা যন্ত্রণা বেড়ে যায়।
এসময় ক্লিনিকে রেখেই ঐ ভাড়াটিয়া ডাক্তার দ্বারা বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর স্বামী মহর আলী জানান, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ক্লিনিক পরিচালক মঞ্জুয়ারা বেগম ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ঘুমের ইনজেকশন দেন এবং পরিচালক মঞ্জুয়ারা ও সহকারী পরিচালক জুলফিক্কার আলী ক্লিনিক থেকে সন্ধ্যায় গোপনে যশোর নেয়ার পথে রেহেনা মারা যায়। এ খবর মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ক্লিনিক মালিক গোপন আঁতাতে অর্থের বিনিময়ে রফা দফা করে মাটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী সন্তান শশুর শাশুড়ি পিতা মাতা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এভাবে গত এক বছরে ঐ ক্লিনিকে শিশুসহ ৪টি মানুষ মারা গেলেও ক্লিনিক মালিকের কোন কিছুই হয়নি। টাকার জোরে সব কিছু ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তার ক্লিনিক ব্যবসা। বিষয়টি নিয়ে ক্লিনিকের সহকারী পরিচালক লেখাপড়া না জানা মূর্খ জুলফিক্কারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি না বাঁচলে আমরা কি করবো যা হবার তাই হবে। তিনি আরও বলেন সাঁতারের উপর কোন পানি নেই সিভিল সার্জন অফিসের নওশের আলী ঠিক থাকলে সব ঠিক। এঘটনায় ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সিভিল সার্জন অফিসের সিএস নওশের আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মহেশপুর উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ২৫/৩০টি ক্লিনিক রয়েছে। কয়েকটির কাগজপত্র ছাড়া বাকিদের উল্লেখযোগ্য কোন কাগজপত্র ও যন্ত্রপাতি নাই। আমরা অতি সত্বর ঝিনাইদহ এবং খুলনার একটি টিম ইনভেস্টিগেশনে নামছি তাতে মহেশপুরে অধিকাংশ ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাবে। এতে জিন্নানগর বাজারে অবস্থিত মনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এপর্যন্ত অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এর বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে মহেশপুর হাসপাতালের টিএইচও ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনিস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন। এর আগেও ঐ ক্লিনিকে কয়েকটি মানুষ মারা গিয়াছে যার রিপোর্ট আমরা এখান থেকে দিয়েছি এবং গতকাল যে মেয়েটি মারা গেছে এবিষয়েও জানিয়েছি কিন্তু ব্যবস্থা নিবেন সিভিল সার্জন । একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসী এই মনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-এর পরিচালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।