জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জনগণের আস্থা হারিয়ে সরকার এখন দিশেহারা। আমরা কারো সঙ্গে নেই, একাই আছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করবো। সংসদীয় তিনশ আসনেই একক প্রার্থী দেবো।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। বর্তমানের তাদের অবস্থা নাজুক।
গতকাল রোববার দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাপা চেয়ারম্যান।
বিএনপির অবস্থা ছিন্নভিন্ন উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে কারাভোগ করছেন। বিএনপি এখন নেতাশূন্য দল। আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারবে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে
জনবিছিন্ন উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় পার্টি এখন জনগণের একমাত্র আস্থার দল; এই মুহূর্তে নির্বাচন করার মতো জনপ্রিয় দল। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিয়ে জাতীয় পার্টিকেই দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ যৌক্তিক। তিনি বলেন, কোটা ব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রদের মনে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল, তাদের মনে কষ্ট, দুঃখ ছিল। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তবে একেবারেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা ঠিক হবে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পেতে চাকরিপ্রত্যাশীদের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়। ঐ টাকা দেয়ার পরও কেউ চাকরি পাবেন সেই নিশ্চয়তা নেই।
এরশাদ বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এরশাদ বলেন, বিগত দিনে আমাদের ছাড়া কেউই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। ৯১ সালে বিএনপি আর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ এ দুই দল আমাদের সহায়তা নিয়েই সরকার গঠন করেছিল। ফলে আমাদের অবহেলা করবেন না। এরশাদ বলেন, দেশের জনগণ এখন আওয়ামী লীগ আর বিএনপির দুঃশাসনের কারণে তাদের প্রতি আস্থা একেবারে হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আমাদের দাবি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তিনি আমাকে অন্যায়ভাবে ৬ বছর কারাগারে আটক করে রেখেছিলেন। আল্লাহর বিচার দেখেন তিনি এখন কারাগারে। আমি যখন কারাগারে ছিলাম আমাকে কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হতো না। অসুস্থ হবার পরেও আমাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। এখন তিনি সুস্থ হয়েও হাসপাতালে যাবার ভান করেন। পৃথক নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারিয়েছে দাবি করে এরশাদ বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) এখন দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। আর বিএনপি নির্বাচনে আসুক না আসুক জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপির অবস্থা ভালো না। রংপুরসহ সারাদেশে জাতীয় পার্টির গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসবে।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপির সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, মেজর (অব) খালেদ আখতার, শওকত চৌধুরী এমপি, সালাউদ্দিন মুক্তি এমপি, সাহানারা বেগম এমপি, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আক্কাস আলী সরকার, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি এসএম ইয়াসির, পীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি নুরে আলম যাদু, কাউনিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন, পীরগাছা উপজেলা সভাপতি আবু নাসের মাহবুবার রহমান, গংগাচড়া উপজেলা সভাপতি সামসুল আলম, বদরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান সাবলু চৌধুরী, রংপুর সদর উপজেলা সেক্রেটারি মাসুদার রহমান মিলন প্রমুখ। পরে মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপিকে সভাপতি ও ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীরকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টি নব গঠিত কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।