প্রতিবেশী দেশ ভারতে সপ্তদশ লোক সভা নির্বাচনে ম্যারাথন ভোটগ্রহণ চলছে। সাত দফার এই ভোট গ্রহণ আগামী ১৯ মে শেষ হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৩ মে জানা যাবে আগামী ৫ বছরের জন্য ভারতের রাজদন্ড কাদের হাতে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক জরিপ, মতামত ও নানাবিধ মেরুকরণ থাকলেও আসল খবর জানার জন্য বিশ্ববাসীকে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু আগাম মন্তব্য করা হলেও বিষয়টি এখন জটিল সমীকরণেই পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মনে করা হয়েছিল যে, হয়তো দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি আবারও ভারতের দন্ডমুন্ডের কর্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে। প্রারম্ভিক জরিপগুলোর ফলাফলে তেমনই ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ক্রমেই বিজেপির সম্ভবনা কমছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া বাহিনী ছন্দে ফিরতে পারছে না, এমন আভাষই মিলছে নানা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও জরিপের ফলাফলে। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সংশয় প্রকাশ করেছেন, উত্তর প্রদেশে বিজেপি'র জয় নিয়ে। দেশের বৃহত্তম রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের অবস্থা যে বেশ টালটামাল, তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। কারণ স্থানীয় জনগণ বিজেপির বিকল্প নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ইতোমধ্যেই। বিষয়টি ক্ষমতাসীনদের জন্য বিপদসঙ্কেতই মনে হচ্ছে।
এবার লোকসভায় আসন সংখ্যা বিবেচনায় দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য মহারাষ্ট্রের নামও সেই তালিকায় এসেছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি এবং জোট শরীক শিবসেনা মহারাষ্ট্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কারণ, ২০১৪ সালে বিজেপি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছে ভোট নিয়েছিল সেসব প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করতে পারেনি বলেই জনমনে জোরালো অভিযোগ। রাজ্যের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্দশা, অভাবনীয় মূল্যস্ফীর্তি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং খরা সহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুযর্োগ মোকাবেলায় ব্যর্থতা বিজেপি'কে বেকায়দায় ফেলেছে। ফলে ভারতের গ্রামাঞ্চলের ভোটাররা এবার বিজেপি'র দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিরোধী দল মুখী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ দেশের ১৩০ কোটি মানুষের দুই-তৃতীয়াংশই মফস্বল এবং গ্রামের বাসিন্দা। তাই গ্রামের মানুষরা ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে মুখ ফেরালে বিজেপি'র জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে না তা মোটামোটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। মহারাষ্ট্রেও যার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। বাণিজ্য নগরী মুম্বাই সহ মহারাষ্ট্রের সর্বত্রই বিজেপি বিরোধী হাওয়া চলছে-এমন অভিমত ব্যক্ত করছে বিশ্লেষকমহল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-শিবসেনা জোট রাজ্যের ৪৮টি আসনের ৪১টি'তে জয় পেয়েছিল। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে সেই অবস্থাটা একেবারেই নেই বরং সার্বিক পরিস্থিতি বিজেপির জন্য এক উদ্বেগজনক সমীকরণের দিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
বিজেপির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে নানাবিধ কারণেই। সরকার কর্তৃক কৃষকদের সমস্যা সমাধানে উদাসীনতা, ব্যর্থতা, কৃষকদের আত্মহত্যা, কৃষকদের আয় কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব। যা ক্ষমতাসীনদের অনেকটা ব্যাকফুটেই ফেলে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের মারাঠওয়াড়ায় বারবার কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় শিরোনামে এসেছে। ঋণ মওকুফের দাবিতে কৃষকরা পথে নেমেছেন। ফলে এই ইস্যুতে রাজপথ হয়েছে উত্তাল। কিন্তু সরকার সমস্যার সমাধান না করে বরাবরই উদাসীন ও নীরব থেকেছে বলেই অভিযোগ বেশ জোরালো। বিদেশ সফরে ব্যস্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী অবসরকালে দেশে ফিরলেও কৃষকদের, দেশের দরিদ্র মানুষদের দিকে তাকানোর সময় পান না বলে অভিযোগ করে আসছেন সাধারণ মানুষ। তাই পাল্টা জবাব দিতে এবার প্রস্তুত দুর্দশাগ্রস্ত ও বঞ্চিত সেসব মানুষরা। পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় জওয়ানদের মৃত্যু, পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের বিমান হানায় সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবিকে মোদী এবং তাঁর দলের লোকেরা আবারও ভোট বাগানোর চেষ্টা চালালেও তা সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন দিক বিবেচনা ও বিশ্লেষণে মার্চ মাসেও বিজেপি সামান্য এগিয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে বিরোধীরা জোরালো কথা বলতে শুরু করেছেন বেকারত্ব, মূল্যস্ফীর্তি ও কৃষিজ পণ্যের নায্য মূল্য নিয়ে। যা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিজেপি বিরোধী মনোভাবকে উস্কে দিচ্ছে। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের ১১টি জেলায় ঘুরে ঘুরে ১৪৮জন কৃষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে একটি সংবাদসংস্থার পক্ষ থেকে। এদের অধিকাংশই ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁদের আয় কমে গিয়েছে। বেকারত্ব ও কর্মহীনতা তাদেরকে কীভাবে চেপে ধরেছে। কৃষিতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও কৃষি পণ্যের নায্যমূল্যের অভাবে কৃষকরা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। যা বিজেপির জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কৃষি পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্দিষ্ট না করায় এই অবস্থা তৈরি হওয়ার জন্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছেন তারা। কৃষিসঙ্কট মোকাবিলায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং তা ক্রমবর্ধমান। প্রতিবাদ-আন্দোলন করেও হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা। এসব দাবিতে তারা বারবার লঙ মার্চ কর্মসূচি পালন করলেও ক্ষমতাসীনরা তা আমলে নেয়নি। তাই সরকারের কাছ থেকে কোনও গুরুত্ব পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন সেদেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই সপ্তদশ লোকসভা আসায় ভোটাররা ক্ষমতাসীনদের এক হাত দেখে নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বলে ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি অক্টোবরে বিধানসভা নির্বাচনেও এর প্রভাব ভালোমতোই পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কৃষকরা অভিযোগ করছেন, গোশালা খুলতেও সরকার অনিচ্ছুক। অন্তত গোশালা খুললে গবাদিপশুর খাবার আর পানীয় জল নিয়ে তাঁদের চিন্তা করতে হতো না। কিন্তু সেসবেরও কোনও বালাই নেই বরং এ বিষয়ে সরকার বেশ উদাসীন। আখচাষীরা অভিযোগ করছেন, চিনি কারখানার মালিকরা আখের সরকার নির্ধারিত দাম তো দেয়ই না, এমনকী যে টাকা দেয় তা-ও মাসের পর মাস ধরে বকেয়া। সরকারের সেদিকেও তেমন কোনও নজর নেই। তারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে শিবসেনাকে ভোট দিয়েছিলেন। এবার শিবসেনা-বিজেপি'কে তারা কোন ভাবেই ভোট দেবেন না। এমনই ইঙ্গিত মিলেছে সাধারণ মানুষের কথাতেও। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাগে ফুঁসছে রাজ্যের যুব সমপ্রদায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, 'এখন আর রাজ্যে কোনও চাকরি নেই। তাই এমন সরকার চাই, যারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।'
এদিকে, দীর্ঘদিনের দূরত্ব ঘুচিয়ে লোক দেখিয়ে বিজেপি-শিবসেনা পরস্পরের হাত ধরলেও দুই দলের কর্মীরা ঠিক কতটা কাঁধে-কাঁধ দিয়ে ভোটের প্রচার করছেন, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, 'দুই দলেরই নিচু তলার কর্মীরা একে অপরের উপর অসন্তুষ্ট। একযোগে কখনওই কাজ করবেন না তাঁরা।' ফলে একদিকে সাধারণ মানুষের হাজারো সমস্যা না মেটানো, অন্যদিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব গেরুয়া বাহিনী এবং তার জোটসঙ্গীর পরাজয়ের পথ প্রশস্তই করছে বলেই দৃশ্যত মনে হচ্ছে।
কোন কোন বিশ্লেষকের ধারণা এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির হিন্দু ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ভালো অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচন-পূর্ব জরিপগুলো বলছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবারের নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেতে পারে। আবার কিছু জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, হয়তো সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে পড়তে পারে এই জোট। আর এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে নরেদ্র মোদি অন্য যে কোনো দলের নেতার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
তবে এবারের নির্বাচনে ২০১৪ সালের মতো মোদি জোয়ার নেই একথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের নীরবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি ২০০৪ সালের নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল। তখনকার জরিপগুলো বলছিলো, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতবে। কংগ্রেস ছিলো আলোচনা ও হিসেবের বাইরে। কিন্তু ওই নির্বাচনে তাক লাগিয়ে জয় পেয়েছিলো কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট। তাই জরিপের ফলাফলকে এখনই সঠিক বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।
এর পেছনে আরো কিছু কারণ দেখছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক নিবন্ধে এ বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। লেখক রশিদ কিদওয়াই বলেছেন, এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ 'ফ্যাক্টর' রয়েছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাক্টর হতে পারে মুসলিমদের ভোটের ধরণও।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনেও সামনে থেকে এনডিএ জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। কিন্তু ভোটারদের দোদুল্যমনতা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিল নাড়ু, কেরালা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রের মতো রাজ্যে শক্তিশালী বিজেপি নেতার অভাব, বর্তমান সরকার বিরোধী মনোভাব এই নির্বাচনকে আরো উত্তেজনাকর করে তুলছে। যা বিজেপির জন্য নেতিবাচকই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে মোদির কঠোর অবস্থান ও তার 'ক্লিন ইমেজ' দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। এটা হলো অনেকগুলো সম্ভাবনার একটি। কিন্তু এবারের নির্বাচন যদি হয়, নরেন্দ্র মোদি বনাম অঙ্কের এবং সেখানে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে জাত-পাত, স্থানীয় ইস্যু, ভোটারদের ওপর আঞ্চলিক দল ও জোটের প্রভাবের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা হয়, সেক্ষেত্রে ২৩ মে'র ফলাফল কিছুটা চমকপ্রদ হলেও হতে পারে।
এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর উত্তর প্রদেশ। এই রাজ্যের ৮০ আসনেই নির্ধারণ হবে পরবর্তী সরকার কারা গড়বে। মোদির জনপ্রিয়তা থাকলেও কট্টর জাতীয়তাবাদ, নিরাপত্তা ইস্যুর বিচারে ভালো অবস্থানে নেই বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিভিন্ন বক্তব্যও বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলছে। অন্যদিকে জাত-পাতের হিসেবে বিরোধীরা ভালো অবস্থায় রয়েছে। কিছুদিন আগেই দেওবন্ধে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিল জাট, যাদব, দলিত ও মুসলিমরা। শুধু উত্তর প্রদেশের দলিত-মুসলিমরা এক হচ্ছে তা নয়। এই রাজ্যের বাইরেও এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচনী জরিপগুলোতে একটি বিষয় বাদ পড়েছে, তা হলো মুসলিমদের নীরবতা। মুসলিম নেতারা এবারের নির্বাচনের আগে কোনো দলের পক্ষে ফতোয়া জারি করেন নি। আবার মুসলিম প্রতিনিধিদের তেমন কোনো বক্তব্য সামনে আসেনি। ভারতের মুসলিম ও বিজেপির সম্পর্কের ক্ষেত্রটা জটিল এবং পারস্পারিক আস্থার ঘাটতি রয়েছে। এই মুসলিম ভোটাররা এবারের নির্বাচনে বিজেপির জন্য একটি ফ্যাক্টও হলেও হতে পারে।
উত্তর প্রদেশের 'আউট স্পোকেন' মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অনাকাঙ্খিত মন্তব্য করে শুধু নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিষিদ্ধ হচ্ছেন তা নয়, বিজেপির জন্য মুসলিমদের ভোট পাওয়ার সুযোগও কমছে। 'আমাদের আছে বজরং বলী, তাদের আছে হযরত আলী' এধরণের বেফাস মন্তব্য করে তিনি মুসলিমদের অনেকের মধ্যে বিজেপি বিরোধী মনোভাব তৈরি করেছেন। যা বিজেপির জন্য নেতিবাচক বার্তাই দিচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের সরকারের থাকা সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি সমপ্রতি জোট করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে। এই জোটের লক্ষ্য অর্জিত হলে উত্তর প্রদেশে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হবে বিজেপিকে। গত নির্বাচনে বিজেপি জোট ৮০ টির মধ্যে ৭০টির বেশি আসনে জয়ী হয়েছিল। এবার সেখানে ৩৫ থেকে ৪০ আসন কমে গেলে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম বা অন্য রাজ্য থেকে তা পূরণ করতে পারবে না বিজেপি।
দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটক ছাড়া অন্য কোনো রাজ্যে শক্ত অবস্থান নেই বিজেপির। তামিল নাড়ুতে বিজেপি জোটের চেয়ে কংগ্রেস জোট জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে। এই রাজ্যে জনপ্রিয়তায় রাহুলের চেয়ে পিছিয়ে আছেন নরেদ্র মোদি। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, কেরালা, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানাতেও মোদি আঞ্চলিক নেতাদের চেয়ে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে আছেন। উত্তর প্রদেশের বাইরে এসব রাজ্যে বিজেপির ভালো করার সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো গান্ধী পরিবারের তিনজন সদস্য কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা যদি এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসকে দেড়শ আসন এনে দিতে না পারেন, আর বিজেপি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তবে কংগ্রেস থেকে গান্ধী পরিবারের বিচ্যুতি শুরু হয়ে যাবে। এই বিচ্যুতি ধারণার চেয়ে দ্রুতই হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর গেরুয়া বাহিনীও দীর্ঘ মেয়াদে ভারত শাসনও পাকাপোক্তই হবে। তাই কংগ্রেসের জন্য এবারের নির্বাচন অস্তিত্ব রক্ষার নির্বাচন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
তবে ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। গত পাঁচ বছরে ক্ষমতাসীন বিজেপি দেশ শাসনে খুব একটা সাফল্যের পরিচয় দিতে পারে নি বলেই সাধারণ মানুষের জোরালো অভিযোগ। তাই তাদের রাজনীতি স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িকতাকে ইস্যুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। মূলত মুসলিম বিরোধী উগ্রবাদকে ভিত্তি করেই শুরু হয়েছিল দক্ষিণপন্থী বিজেপির পথ চলা। আর সে ইস্যুতেই ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধবংস করেছিল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। এতে তারা সফলও হয় এবং দ্রুততম সময়ে ক্ষমতায় আসে। এতে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় বিদ্বিষ্ট হলেও বিজেপির পালে পাওয়া দিয়েছিল ভোট উগ্রবাদী হিন্দুরা।
বাবরী মসজিদের স্থলে রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতে বিজেপি উগ্রবাদী আবেগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু দীর্ঘদিনে রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরুণ না হওয়ায় উগ্রবাদীদের আস্থা হারাতে শুরু করেছে দলটি। অপরদিকে বিজেপি সরকারের আমলে মুসলমানদের ওপর যেভাবে জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে, বিশেষ করে আসাম ও পশ্চিম বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যেভাবে মুসলিম বিরোধী উস্কানী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে বিজেপির সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করা বেশ কষ্টসাধ্য বলে মনে করছেন অনেকেই। সঙ্গত কারণেই মুসলিম ভোটারাই এবারের নির্বাচনে অনেকটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। তাই গেরুয়া বাহিনীর পক্ষে ক্ষমতায় ফেরা খুব একটা সহজসাধ্য হচ্ছে না তা মোটামোটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।
সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা : সাংবাদিক
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।