ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি ধারণা করা হচ্ছে নিখোঁজরা সবাই মারা গেছেন
মানবপাচার চক্রের হোতা নোয়াখালীর ৩ ভাই
স্টাফ রিপোর্টার
অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবির শিকার বাংলাদেশিরা যে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন, তার হোতাসহ ৫ জনের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে সরকার। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা সবাই মারা গেছেন।
এদিকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা গেছে, তারা ৪ থেকে ৬ মাস আগে দুবাই হয়ে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া হয়ে ইতালিতে যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। তাদের নিয়মিত নির্যাতন করা হতো। যারা আহত হয়েছেন তারা দেশে ফিরতে চাইলে তাদের নিয়ে আসা হবে এবং যেসব বাংলাদেশি নৌকাডুবির ঘটনায় মারা গেছেন, তাদের লাশ স্বজনরা চাইলে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে তিউনিসিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল বুধবার তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, নোয়াখালীর ৩ ভাই এই চক্রের হোতা। মাদারীপুরের আছে আরও ২ জন। তদের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।
সন্দেহভাজন ঐ মানব পাচারকারীদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তবে এই ব্রিফিংয়ে ৩৯ বাংলাদেশির একটি তালিকা তিনি প্রকাশ করেন, যাদের কোনো খোঁজ এখনও মেলেনি।
সংঘাতময় লিবিয়ার জুওয়ারা থেকে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২টি নৌকায় রওনা হয়েছিলেন দেড় শতাধিক যাত্রী। তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি মিসরের নাগরিক ছিলেন।
এর মধ্যে ৫০ জন আরোহী নিয়ে একটি নৌকা তীরে ভিড়তে পারলেও শুক্রবার ভোররাতে তিউনিসিয়া উপকূলে অন্য নৌকার যাত্রীদের ছোট একটি নৌকায় তোলার পর যাত্রীর ভারে তা ডুবে যায়। তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় নৌকাডুবির ঘটনার পর প্রতিবেশী লিবিয়া থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে তিউনিসিয়ায় পাঠানো হয়। এ এস এম আশরাফুল ইসলাম নামের ঐ কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, নৌকাডুবির পর যে বাংলাদেশিরা এখনও নিখোঁজ, তাদের লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে শরীয়তপুরের নড়িয়ার উত্তম কুমার নামে একজনকে শনাক্ত করার কথা জানান আশরাফুল।
গতকাল বুধবারের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঐ একজনের বাইরে ৩৯ বাংলাদেশির নাম পরিচয় তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২২ জনই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের।
নৌকার আরোহীদের মধ্যে যাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪ বাংলাদেশির নাম পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জন আছেন তিউনিসিয়ার হাসপাতালে। বাকি ১০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, গত ৯ মে ২টি নৌকায় করে ১৩০ জনের মতো বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে রওনা দেন। প্রথম নৌকাটি ইতালিতে পৌঁছেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। অন্য নৌকাটিতে ৭০-৮০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। সেই নৌকাটি ডুবে যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আহত ১৪ জনের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। তারা তিউনিসিয়ার জার্জিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ১০ জন তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে রয়েছেন।
আবদুল মোমেন বলেন, নোয়াখালীর ৩ ভাইয়ের একটি চক্র এবং সিলেটের ফ্রড ট্রাভেল এজেন্সিগুলো তাদের পাঠিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা এবার একটি শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।