যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনা চললেও যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। অন্যদিকে তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধে জাড়ানোর কোনো ইচ্ছে ওয়াশিংটনের নেই বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। রাশিয়ার সোচিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকে পম্পেও বলেন, মার্কিন স্বার্থে আঘাত আসলে উপযুক্ত জবাব দেবে ওয়াশিংটন। ইরানকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনার খবরকে ভুয়া বলে নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্রাম্প।
ব্রাসেলসে একদিনের অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি শেষে মঙ্গলবার রাশিয়া যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এসময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে ইরান-বিরোধী পদক্ষেপে মস্কোর সমর্থন চাইলেও ইরান নীতির প্রশ্নে রাশিয়ার কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পাশ্চাত্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে ওয়াশিংটন বেরিয়ে গেলেও এর প্রতি রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে মারাত্মক ভুল করেছে। এ চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন চুক্তির প্রতি সমর্থন জানালেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। মাইক পম্পেও বলেন, ইরানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে যেতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি না। তবে তেহরানকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, মার্কিন স্বার্থে আঘাত আসলে ওয়াশিংটন এর উপযুক্ত জবাব দেবে। দেশটির নেতাদের কাছ থেকে আমরা স্বাভাবিক আচরণ আশা করছি। তারা হিজবুল্লাহসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সহযোগিতার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তেহরানের হুমকি মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরেছেন ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকের সময় শানাহান এ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনকে ভূয়া আখ্যা দিয়ে সেনা মোতায়েনে পরিকল্পনা নাকচ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি, এটা ফেইক নিউজ। অবশ্যই আমরা এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারি। তবে এখনই এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করছি না। আশা করি, এ ধরনের পরিকল্পনা আমাদের নিতে হবে না। যদি নিতেই হয়, তাহলে বহু সেনাসদস্য পাঠানো হবে। যার সংখ্যা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠা সত্ত্বেও যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভালো করেই জানে, এ ধরনের সংঘাতে লাভবান হতে পারবে না ওয়াশিংটন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনে সুস্থ মানুষ নেই। এরা কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা চুক্তি মেনে চলার ধার ধারে না। এদের সঙ্গে আলোচনার অর্থ হবে বিষপান করা। তাদের মোকাবিলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরানি জনগণ। ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর একের পর এক তেহরান-বিরোধী পদক্ষেপে ব্যস্ত ট্রাম্প প্রশাসন। সবশেষ পারস্য উপসাগরে মার্কিন রণতরী মোতায়েনকে কেন্দ্র কোরে দেশ দুটি মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। তবে দুই দেশের নেতাদের যুদ্ধে না জাড়ানোর ইঙ্গিতকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।