চাকরির প্রলোভনে দৌলতদিয়া পতিতালয়ে পাচার হচ্ছে নারীরা
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে আবু কালাম আজাদ
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে অন্তত ৩ হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। এর মধ্যে রয়েছে ৫ শতাধিক শিশু কিশোরী। তবে সংখ্যা নিয়ে আছে ভিন্ন মত। যৌনকর্মীর ওইসব শিশু-কিশোরীদের অধিকাংশই দালালের খপ্পরে পড়ে যৌন পেশা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সক্রিয় রয়েছে অসংখ্যা নারী পাচারকারী দলের সদ্যস্য বিভিন্ন
বয়সের কিশোরী তরুণীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নানা রকম প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পাচারকারীরা তাদের যৌনপল্লীতে বিক্রি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্লীর প্রভাবশালী বাড়িওয়ালীদের ছত্রছায়ায় এখানে রয়েছে বিশাল এক দালাল চক্র। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দালালরা নানা কৌশলে সাধারণ মেয়েদের ফুসলিয়ে এই যৌনপল্লীতে এনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাড়িওয়ালীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দৌলতদিয়ার এই নিষিদ্ধ পল্লীতে দালালের মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে ২০ থেকে ৩০ শিশু-কিশোরীকে এনে যৌন পেশা গ্রহণে বাধ্য করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা য়ায, পাচারকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থানের কিশোরী ও কর্মরত গার্মেন্ট কর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেম করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌনপল্লীতে এনে বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বাসাবাড়ীতে কাজ করার সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে বাসা থেকে বের হলে ওতপেতে থাকা নারী পাচাকারীদের খপ্পরে পড়েছে তারা। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া রেলস্টশন এলাকায় থেকে বিউটি আক্তার (১৪) এক কিশোরীকে উদ্ধার করে মুক্তি মহিলা সমিতির মহিলা কর্মী রুমা আক্তার। ওই কিশোরীর বাড়ি ঢাকা মিরপুরে ২ নম্বরে তার পিতার নাম মো. লিটন শেখ। বিউটি তার কাকার বাড়িতে বেড়ানো জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় সপ্ন নামে এক যুবকের সাথে পরিচয় হয় তাকে দৌলতদিয়া নিয়ে আসে। দৌলতদিয়া রেলষ্টশন রেখে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে তাদের ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে পল্লীর প্রভাবশালী বাড়িওয়ালীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। উদ্ধারকৃতদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, তাদের মতো অনেক মেয়ে আছে যাদের ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে এখানে আনার পর তাদের দিয়ে জোর করে দেহব্যবসা করানো হয়। বাড়িওয়ালা এবং বাড়িওয়ালীদের কথা না শুনলে ঘরের মধ্যে আটকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এর পর খদ্দেরকে খুশি করতে না পারলে অন্য বাড়িওয়ালীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। অন্য কোনো বাড়িওয়ালার পছন্দ হলে দরদামের মাধ্যমে তার কাছে বিক্রি। তখন আবার শুরু হয় নির্যাতন। তখন বালিওয়ালীর কথা মতো চলতে হয়। এভাবে একটি মেয়ের বিক্রি হয় একাধিকবার এ পল্লীতে বিক্রি হয়ে থাকে। আর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পালানোর চেষ্টা করলে তার সঙ্গে রাখা হয় একজন করে পাহারাদার। নির্যাতনে শিকার হয়ে যৌনবৃত্তি করছে কয়েক'শ কিশোরী-তরুণী। মাঝেমধ্যেই নির্যাতনে আহত অনেক যৌনকর্মীকে হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা করার ঘটনা ঘটে। যৌপল্লীতে থাকা এসব মেয়ের কাছে আসা খরিদ্দারের মোবাইল ফোন থেকে সুযোগ বুঝে পরিবারের কাছে ফোন করে জানানোর পর আত্মীয়-স্বজন স্থানীয় পুলিশের সহায়তার কিশোরী তরুণীকে উদ্ধার করে থাকে। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা শিশুদের যৌন পেশায় লিপ্ত করে সংশ্লিষ্ট নারী ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত বছরে ৭ ডিসেম্বর ৯৯৯ নম্বারে ফোন করে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর আন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি পায় তিন কিশোরী ও এক তরুণী। এ সময় রুপা ও সুমি নামের ২ নারী ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আলাপকালে এক কিশোরী যৌনকর্মী বলে ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে আনা হয় যৌনপল্লতে বিক্রি করে দেয়। এর পর থেকে শুরু হয় অন্ধকারে পথ চলা।
এ প্রসঙ্গে পতিতাপল্লীতে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি মহিলা সমিতির প্রকল্প কর্মকর্তা আতাউর রহমান (মঞ্জু) বলেন, বিভিন্ন সময় অপেক্ষা করে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর শিশু যৌনকর্মীদের উদ্ধারে তারা কাজ করছেন। চলতি বছর ৯ জনকে পল্লী থেকে উদ্ধার করাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে সহায়তা করা হয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ এজাজ শফী বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বর্তমানে নিয়মিত পুলিশ টহল চলমান রয়েছে। এছাড়া যৌনপল্লীতে সব ধরনের আপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লী সংলগ্ন এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং সভা করে সবাইকে সচেতন ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াও পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতেও বিভিন্ন সময় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে অভিযান চালিয়ে একাধিক নারীকে উন্ধার করা হয়ে থাকে। নারী পাচারকারী চক্রের তৎপরতা বন্ধ ও জোরপূর্বক যৌন পেশায় লিপ্ত করার বিরুদ্ধে পুলিশ সজাগ রয়েছে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।