ঈদে নাড়ীর টানে পরিবার পরিজনের কাছে আসা মানুষ ঈদ শেষে ঢাকায় যেতে শুরু করেছে। ঈদের সপ্তম দিন গতকাল মঙ্গলবার আমতলী লঞ্চঘাট থেকে এমভি সুন্দর বন-৬ লঞ্চ ধারন ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এ রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এছাড়া লঞ্চের স্টাফ ও দালালদের কাছ থেকে যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কেবিন ও ডেকের জায়গা কিনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, আমতলী - ঢাকা রুটে এমভি হাসান হোসেন, এমভি ইয়াদ ও এমভি সুন্দর বন-৬ নামের তিন খানা লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার জন্য অতিরিক্ত কোন লঞ্চ সার্ভিস দেয়নি লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত কোন লঞ্চ সার্ভিস
না দেয়ায় ঢাকামুখী যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ বিআইডবিস্নউটিএ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে যাত্রী ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ থেকে পাঁচগুণ যাত্রী পরিবহণ করছে। এমভি ইয়াদ লঞ্চে যাত্রী ধারন ক্ষমতা ৩৯৬ জন, নেয়া হচ্ছে এক হাজার দুশত থেকে এক হাজার পাচশ জন। প্রিন্স অব হাসান-হোসেন-১ লঞ্চে যাত্রী ধারন ক্ষমতা ৩৪২ জন, নেয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে দু'হাজার জন। এমভি সুন্দর বন-৬ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬০৩ জন, নেয়া হচ্ছে এক হাজার পাঁচশ থেকে ১ হাজার আটশ জন। এছাড়া সরকারী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। পূর্বে আমতলী-ঢাকা প্রথম শ্রেণীর সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ছিল এক হাজার টাকা, ডাবলে কেবিনের ভাড়া দুই হাজার টাকা এবং ডেকের যাত্রীদের ভাড়া ছিল ৩শ টাকা। ঈদের আটদিন পূর্বে কোন কারণ ছাড়াই এ ভাড়া বৃদ্ধি করে সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ টাকা, ডাবল কেবিন দুই হাজার ৪০০ টাকা এবং ডেকের ভাড়া তিনশ ৫০ টাকা আদায় করছে।
গতকাল মঙ্গলবার আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, এমভি সুন্দর বন-৬ লঞ্চ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ যাত্রী বহন করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ঘাট ছেড়েছে। এ লঞ্চটিতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। মানুষ ডেকে জায়গা না পেয়ে লঞ্চের ছাদে ও সম্মুখভাগে অবস্থান নিয়েছে। অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। লঞ্চটি ঘাট ত্যাগ করার কথা বিকেল ৪টায় থাকলেও দুপুর ১টায় ছেড়ে গেছে।
আমতলী উপজেলার টেপুড়া গ্রামের মো. মেহেদী হাসান, খবির উদ্দিন, শিউলি ও সামিহা বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই এমভি সুন্দর বন-৬ লঞ্চে ঢাকায় যাচ্ছি। তারা আরও বলেন একটি ডাবল কেবিন অতিরিক্ত ৫শ টাকা দিয়ে বুকিং দিয়েছি এবং দুই হাজার চারশ টাকা ভাড়া দিয়েছি। তালতলীর কামাল মিয়া বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। কি হয় আল্লায় জানে। এমভি সুন্দর বন-৬ লঞ্চের সুপার ভাইজার অপু অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া ও ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের চাপ বেশী। তাই সময়ের তিন ঘন্টা পূর্বে আমতলী ঘাট লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছি।
বরগুনা বিআইডবিস্নউটিএ'র আমতলী লঞ্চঘাটে টিকেট আদায়কারী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, এমভি সুন্দর বন-৬ লঞ্চটি ঘাট থেকে দুপুর ১টায় এক হাজার তিন'শ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। বরগুনা বিআইডবিস্নউটিএ'র সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ঐ ঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহনের বিষয়টি দেখার জন্য প্রশাসনের লোকজন রয়েছে। তারা এটা দেখবেন। তিনি আরও বলেন, আমতলী ঘাটে অনেক যাত্রী হয়। একটি লঞ্চ দিয়ে সঙ্কুলন হয় না। ঐখানে আরো একটি লঞ্চের প্রয়োজন। আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার বাইরে কোন লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না। এটা করে থাকলে আগামীকাল ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।