পটুয়াখালীর কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সার্ভেয়ার শাখার প্রায় তিন শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উঁই পোকা কেটে নষ্ট করে ফেলেছে। এতে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিনষ্ট হয়ে যাওয়া নথিপত্রের মধ্যে ভূমিহীন হিসেবে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া জমির কেস নথি ছিল। এতে অনেক দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার সরকারের দেয়া জমি ভোগদখলে থাকলেও তাদের নামে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রীসহ নতুন খতিয়ান সৃজন না হওয়ায় বন্দোবস্ত পাওয়া ওইসব জমির মালিকানা নিয়ে অজানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে সার্ভেয়ার শাখার কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক বললেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। এসি ল্যান্ড বললেন, উর্ধ্বতনদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া ব্যবহার অনুপযোগী টিনশেড কক্ষ থেকে সার্ভেয়ার শাখা অন্যত্র স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়াকে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নের রোল মডেল এলাকা হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর, একাধিক কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা, বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌ ঘাঁটি স্থাপন, সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন,
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় এখানকার জমি জমার দাম হু হু করে বেড়ে গেছে বহুগুন। সরকারি খাস জমিতে দখল প্রবণতা বেড়েছে প্রভাবশালীদের। এক শ্রেণীর অসৎ ভূমি কর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে কুয়াকাটা পর্যটন, পায়রা সমুদ্র বন্দর সহ উন্নয়ন কাজ চলমান এলাকার মৌজা সমূহের জমির আর এস, এসএ খতিয়ান সমূহের বেশ কিছু তথ্য মূল বালাম বই থেকে উধাও হয়ে গেছে। পৃষ্ঠা ছেড়া ও কাটাকাটি করে লেখা দৃশ্যমান হয়। এছাড়া ১৯৬৫ ও ১৯৭০ এর প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, বালাম, রেজিস্ট্রার, নথিপত্র খোয়া যাওয়ার সুযোগে স্থানীয় ভূমি অফিস কানেকশনে সৃষ্টি করা হয়েছে জমির জাল জালিয়াতি কাগজপত্র। এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া অনেক দরিদ্র পরিবারের জমিতে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ায় উপজেলার অনেক মৌজার সরকারি জমি নিয়ে ঝগড়া, ফ্যাসাদ, মামলা চলমান আছে। এরকম সময় সরকারি বন্দোবস্ত পাওয়া জমির তিন শতাধিক কেস নথি উঁই পোকা কেটে নষ্ট করে ফেলায় হত দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার গুলোতে দেখা দিয়েছে ফের অজানা আতঙ্ক, শঙ্কা।
এদিকে দরিদ্র মানুষের বন্দোবস্ত পাওয়া তিন'শ কেস নথি উই পোকা কেটে বিনষ্ট করেছে না পরিকল্পিতভাবে অযত্ন, অবহেলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে সংরক্ষন না করে ওই সব গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, দলিল দস্তাবেজ নষ্ট করা হয়েছে, এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার দাবি তাদের। যাতে ওই সব বন্দোবস্তের বিপরীতে নতুন কাগজ সৃষ্টি করে দরিদ্রদের পাওয়া শেষ আশ্রয়টুকুও হাতছাড়া না হয়।
কলাপাড়া ভূমি অফিস সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এটি আমার যোগদানের পূর্বের ঘটনা। আমি যোগদানের পর ব্যবহার অনুপযোগী টিনশেড কক্ষের এসব নষ্ট হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাগজ দেখে এসি ল্যান্ডকে সার্ভেয়ার শাখাটি স্থানান্তরের জন্য বহুবার বলেছি। কিন্তু শত বলার পরও টিনশেড ব্যবহার অনুপযোগী ঘরেই সার্ভেয়ার শাখা আছে।'
কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু ম-ল বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতনদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া ব্যবহার অনুপযোগী টিনশেড কক্ষ থেকে সার্ভেয়ার শাখা অন্যত্র স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।