মানব সমাজের শিক্ষার অবারিত দ্বার সংস্কৃতি-বিনোদন। বিনোদন মনের খোরাক, যা মনকে রাখে কলুষমুক্ত, করে তোলে প্রফুল্ল। সৃষ্টিশীলতায় যার অবদান অসামান্য। সেই বিনোদন যদি সংসারের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়, শিক্ষা দেয় পারিবারিক-সামাজিক নানা কূটকৌশল, যদি বিনোদন হয়ে ওঠে প্রাণ সংহারি কায়দা-কানুন শেখার মাধ্যম, তখন সেই বিনোদনকে নিয়ে সচেতন হতে হবে আমার-আপনার সবার। বিনোদন যখন সমাজে উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের জন্ম দেয় তখন প্রয়োজনে সেই বিনোদন পরিমার্জনে বা বন্ধে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনোদনের নামে ভারতে যেসব সিনেমা এবং সিরিয়াল নির্মিত হচ্ছে তা পারিবারিক কলহ-কোন্দল, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা ইত্যাদি যত নিষিদ্ধ ও ন্যাক্কারজনক কাহিনীতে ভরা। তাতে থাকে পরকীয়াকে বৈধতা দেয়ার অপকৌশল। থাকে সাধ্যের অতীত এবং আমাদের সংস্কৃতির সাথে
সাংঘর্ষিক পোশাক-পরিচ্ছদের বাহারি সব আয়োজন। যা ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম আঘাত। সিরিয়ালগুলোতে দেখানো হয় সংসারে একজন অপরজনকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়, ক্ষতি করা যায়, কিভাবে শান্তি বিনষ্ট করে সংসার ভাঙা যায় ইত্যাদি। এমনকি ষড়যন্ত্র করে কাউকে হত্যা করার কৌশলও তাতে দেখানো হয়। এতে করে যারা জানে না তাদেরকেও শিখিয়ে দিচ্ছে নানা অপকর্ম। সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক সমস্যা, দেখা দিচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়।
অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশ্বসংস্কৃতি আজ সবার নাগালে। যার সুবাদে বাংলাদেশের শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় এইসব সিরিয়াল। আর এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বিশাল এক দর্শক গোষ্ঠী। তারা এই নিষিদ্ধ এবং সর্বনাশা কাহিনীনির্ভর সিনেমা আর সিরিয়ালে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে সংসারে ঝগড়া, অশান্তি নৈমিত্তিকে রূপ নিয়েছে। ভাঙছে সংসার, ঘটছে আত্মহত্যার মতো করুণ কাহিনী। এর প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সময়ের দাবি।
পুনশ্চ : দুঃখজনক যে, ভারতীয় এই সব সিরিয়ালের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সোচ্চার হতে দেখা গেলেও আজ পর্যন্ত এ নিয়ে আমাদের কোনো নেতাকে টু-শব্দটি করতে শোনা যায়নি।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।