রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আদালতের আশপাশের সব রাস্তায় বন্ধ করে দেয়া হয়। নাজিম উদ্দিন রোড এলাকার প্রবেশপথগুলোতে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের সতর্ক প্রহরায় রাখা হয়। তালিকাভুক্ত সাংবাদিক ছাড়া কাউকে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আদালত ভবনের আশপাশে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। এ এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া চাঁনখারপুল থেকে শুরু করে আশপাশের সড়কগুলোয় রাস্তা দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। জনসাধারণের প্রবেশে রয়েছে কড়াকড়ি, সন্দেহ হলেই পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তল্লাশি শেষে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এছাড়া, শাহবাগ, ফার্মগেট,
বকশিবাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
জানা গেছে, ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার গুরুত্বপূর্ণ এ রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সারাদেশে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর এই নির্দেশনা অনুযায়ীই গত মঙ্গলবার থেকে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবারও বাড়তি নজরদারি থাকবে।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে র্যাব-পুলিশের অর্ধশতাধিক চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়। জোরদার করা হয়েছে টহল ব্যবস্থাও। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিশেষ স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়, প্রস্তুত রাখা হয় সাজোয়া যান ও জলকামান। রায়কে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করতে সক্রিয় রয়েছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
এদিকে, গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার এবং কাশিমপুর ১ ও ২নং কারাগারে রাখা হয়েছে। তাই এ ৩ কারাগারে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়। রায়ের দিন আসামিদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানের সামনে-পেছনেও ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। আসামিদের আনা-নেয়া নির্বিঘ্ন করতে কারা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের সমন্বয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল।
অপরদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে বিন্দুপরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিঞা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার সময় পুরান ঢাকার বিশেষ আদালত প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের রায় বিচার ব্যবস্থার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ রায়কে কেন্দ্র করে নৈরাজ্যের কোনো সম্ভাবনা নেই। সহিংসতা বা নাশকতারও কোনো আশঙ্কা নেই। তারপরও রাজধানীসহ সারাদেশে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে, কোনো প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। জনগণের জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করলে, মানুষের ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করলে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।