রাজশাহীর হাসপাতালগুলোতে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফটোসেশন
নিজেদের অবস্থান কোম্পানির কাছে তুলে ধরতেই এ অভিনব পন্থা
জনতা ডেস্ক
রাজশাহী থেকে রফিকুল আলম ও এসএইচএম তরিকুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মা, শিশু, প্রজনন ও বয়ো:সন্ধি স্বাস্থ্য কর্মসূচি, চক্ষু হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য সেবাদানকারি সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও অভিভাবকদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে কৌশলে ছবি তুলতে (ফটোসেশন) মেতে উঠছেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা (রিপ্রেজেন্টেটিভ)। নিজেদের অবস্থান কোম্পানীর কাছে তুলে ধরতেই এ অভিনব পন্থায় কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন তারা। কোনো রোগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তার চিকিৎসাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও অভিভাবকদের। তবে এদের দৃষ্টিভঙ্গি বা চাল-চলন দেখলে মনে হবে তারাও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক বা বড় কর্মকর্তা। যেন রোগীদের সেবা দেয়ার জন্যই এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
সূত্র মতে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সপ্তাহে দুদিন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ঢোকার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই হাসপাতালের বর্হি বিভাগের সামনে রোগীদের চিকিৎসাপত্র নিয়ে তাদের কোম্পানীর ওষুধ লেখা আছে কি না তা দেখতে রোগীদের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। এ চিত্র শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নয়, রাজশাহীর সকল সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের। ফলে বিড়ম্বনায় রোগী ও তার অভিভাবকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রামেক হাসাপাতালের চিকিৎসকদের সাথে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (প্রতিনিধিদের) দেখা করার নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ম তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের বাইরেও চিকিৎসকদের সাথে দেখা করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসকের চেম্বারের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে রিপ্রেজেস্টিটিভ। যখনই কোনো রোগী বেরিয়ে আসছে সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাত থেকে চিকিৎসাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলে নিচ্ছেন। তবে কেউ কেউ চিকিৎসাপত্র বিবরণটি নোট নিচ্ছেন। এ চিত্র বুধবার দুপুরে রামেক হাসপাতালে দেখতে গেলে চোঁখে পড়ে আরেকটি দৃশ্য। দেখা গেলো বর্হিবিভাগের গেটে টাঙ্গানো রয়েছে ওষুধ প্রতিনিধিদের ব্যাগ। যা দেখলে ভ্রাম্যমান ব্যাগের বাজার বা দোকান ছাড়া কিছুই কল্পনা করা যাবে না।
রামেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা পুঠিয়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের রুহি বলেন, আমার মা'র বুক ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বেরুতেই তাড়াহুড়ো করে দু'জন ভদ্রলোক এসে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিল। তারপর পাঠিয়ে দিল। প্রথমে তাদের ডাকা দেখে মনে করেছিলাম ভালোই হলো, ওষুধ মনে হয় ফ্রি পাবো। এজন্য কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে থেকে ওদের ছবি তুলছে ও লিখতে দিয়েছিলাম। পরে দেখি ডাক্তারকে জড়িয়ে ঐ দু'জন উল্টাপাল্টা মন্তব্য করছে। প্রায় একই বর্ণনা দিলেন নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার জিয়া, গোদাগাড়ী এলাকার মন্টুসহ অনেকেই।
মহানগরীর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে (মা, শিশু, প্রজনন ও বয়ো:সন্ধি স্বাস্থ্য কর্মসূচি) চিকিৎসা নিতে আসা মাহাফুজা বলেন, ডাক্তারের রুম থেকে বেরুতে না বেরুতেই মৌমাছির মতো ওষুধ কোম্পানির লোকজন প্রেসক্রিপশন চাইলো। তবে তাদের বিষয়টি আগে থেকেই অবগত থাকার কারণে প্রেসক্রিপশন দেইনি। কিন্তু সাধারণ সহজ সরল মানুষরা তো এ বিষয়ে অবগত নেই, ফলে তারা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে।
চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নগরীর কাজলা এলাকার মুকুল বলেন, ডাক্তারের রুম থেকে বের হতে না হতেই দু'জন লোক আসলো, প্রেসক্রিপশন চাইলো, দিলাম, দেখি মোবাইলে ছবি তুলে নিলো। এরপর বলল আপনি যান। বাইরের গেটে আসতেই আবারও কয়েকজন ধরেছিল। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতায় আর দেইনি। যে কারণে প্রথমে আপনাকেও (প্রতিবেদক) মনে করেছিলাম ওষুধ কোম্পানীর লোক। এসব প্রসঙ্গে সেলফোনের মাধ্যমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সাথে বুধবার দুপুরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।