রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে বাইরে বসবাসরত স্থানীয়রা চরম আতংকে
কক্সবাজার থেকে কফিল উদ্দিন আনু
রোহিঙ্গা আশ্রয়ের তিন বছর অতিবাহিত হলেও মায়ানমারের প্রত্যাবাসন অথবা ভাসানচরে স্থানান্তর কোনটাই কার্যকর হয়নি। একই স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসের সুযোগে রোহিঙ্গা আর স্থানীয়দের মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভাষা, আচরণ, পোশাকসহ পেশাগত দিক দিয়ে হুবুহু মিল থাকার সুযোগে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের দাপট দেখাচ্ছে। এমনকি একাধিক স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের বসতভিটায় হামলা, ভাঙচুর ও জবর দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা থানা, প্রশাসন বা স্থানীয় ভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন স্বস্তিমূলক জবাব পাইনি। যার ফলে স্থানীয়দের বসবাস করতে হচ্ছে চরম আতংকে।
লম্বাশিয়া গ্রামের মৃত নছরত আলীর ছেলে ছৈয়দ নুর (৫৮) অভিযোগ করে জানান, সে লম্বাশিয়া বনবিভাগের জায়গার উপর বসবাসকরে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোহিঙ্গা আসার আগে তার দখলে থাকা প্রায় ৫ একর বনভূমিতে ফলজ, বনজ, ঔষধী গাছ, পানের বরজ, ক্ষেতখামার, মাছ চাষ প্রভৃতি উন্নয়নমূলক কাজ করে সংসার জীবন চালিয়ে আসছিল। সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাছে প্রদত্ত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে তার অধিকাংশ জায়গা জবর দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে তার ভিটা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। সেখানে কিছু ফলজ ও বনজ গাছগাছালি ও ফলমূলের গাছ ছিল। রোহিঙ্গারা রাতের বেলায় গাছগুলো ভেঙে দিয়ে ফলফলাদিগুলো নিয়ে যায়। বাঁধা দিতে গেলে রোহিঙ্গারা ধারালো কিরিচ নিয়ে তাদের আঘাত করতে তেড়ে আসে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান বলেন, সেখানে ক্যাম্প ইনচার্জ দায়িত্বে রয়েছে। তাকে বিষয়টি জানানো উচিত ছিল। তদুত্তোরে অভিযোগকারী ছৈয়দ নুর বলেন, ক্যাম্প ইনচার্জকে জানালে উল্টো জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বলেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের স্থায়ীত্ব টেকসই হওয়ার কারণে রোহিঙ্গারাও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিধিনিষেধ তোয়াক্কা করছে না। তারা ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তার, মাদকদ্রব্য বিক্রি, ইয়াবা পাচার, অপহরণ বাণিজ্য, মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের নামে যুবতী নারী বাণিজ্য, মায়ানমার থেকে স্বর্ণের বার পাচার, বিনিময়ে বাংলাদেশি মুদ্রা মিয়ানমারে পাচার করে রোহিঙ্গারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। স্থানীয়দের প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য মতে ক্যাম্পের অনেক স্বচ্ছল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নামমাত্র বাসাবাড়ি রাখলেও তারা শহরে গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন। তাদের চলাফেরা স্থানীয়দের চাইতে অনেক উন্নত। এমনকি তাদের ছেলে মেয়েরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করারও অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল বলেন, তারা ১৯৯১ সনে এদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে একথা অবিশ্বাস করার কোন অবকাশ নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসকল রোহিঙ্গারা এখানে এসেছে তাদের আচার আচরণ, চলাফেরা আদিমযুগকেও হার মানিয়েছে। টাকার জন্য অপহরণ করে জবাই করে হত্যা করা এক শ্রেণির রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের শক্ত হাতে দমন করা না হলে ভবিষ্যতে ক্যাম্পের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই সরকারের মূল টার্গেট। সে লক্ষেই কাজ করছেন তারা। বলেন, ক্যাম্পে তাদের চলাফেরার নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর তাদের প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে তোমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হও যে কোনো সময় মিয়ানমার যেতে হবে। তোমাদের নিজেদের দেশে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর নাইপিদোতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তির বাস্তবায়ন আজও হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে অংসান সুচি সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তাই সরকার আশাবাদী রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা সুরাহা সম্ভব হবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।