করোনা মহামারীতে অনৈতিক বাণিজ্য
দেশে এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। করোনা মহামারীর এমন ভয়াবহ অবস্থায় এক শ্রেণির চিকিৎসক ও হাসপাতাল ব্যবসায়ী রোগীদের সর্বস্ব লুটের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রয়োজন না হলেও রোগীকে আইসিইউতে রাখা, লাখ লাখ টাকার অযৌক্তিক বিল করা, ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেয়াসহ আরো অনেকভাবেই রোগীর স্বজনদের পকেট কাটা হচ্ছে। প্রতিদিনই খবরের কাগজে উঠে আসছে এমন বহু ঘটনা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টোসিলিজুমাব ৪০০ এমজি প্রতি ডোজ ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৯ হাজার ২৪২ টাকা। উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে হাসপাতালে সরবরাহ করা হয় আরো কম দামে, কিন্তু কোনো কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগীদের ওষুধটি দেয়া হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীর পান্থপথের একটি বড় হাসপাতালে চিকিৎসক হঠাৎ করেই রোগীর স্বজনদের বলেন, টোসিলিজুমাব ৪০০ এমজি ওষুধটি নিয়ে আসতে। হাসপাতালের ওষুধের দোকানে ওষুধটি নেই। রোগীর স্বজনরা অন্য কোথাও ওষুধটি পাননি। পরে হাসপাতালেরই এক কর্মী ৯০ হাজার টাকায় ওষুধটি সরবরাহ করেন। একই ওষুধ গুলশানের আরেক হাসপাতালে নেয়া হয় এক লাখ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কোনো কোনো চিকিৎসক এ ধরনের আরো কিছু ওষুধ বাবদ বড় অঙ্কের টাকা 'কমিশন' পেয়ে থাকেন। এমনটা ভাবতেও আমাদের লজ্জা হয়। ওষুধের দাম নিয়ে এমন নৈরাজ্যের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের বিল নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
করোনা মহামারী একটি চরম মানবিক সংকট হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় যারা চরম অনৈতিক ও অমানবিক ফায়দা লুটছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন বেশ কিছু অনিয়মের চিত্র। সুযোগ সন্ধানীরা সব কিছুতেই সুযোগ খুঁজতে থাকে। করোনা মহামারীর কারণে দেশ আজ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এসব সুযোগ সন্ধানীদের ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, সরকার এদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।