খুলনায় একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তিতে আমজনতা
খুলনা থেকে বি এম রাকিব হাসান
খুলনার ৬টি আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। দুশচিন্তায় রয়েছে প্রার্থীরাও। সর্মথকদের মধ্যেও চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক। সামাজিক মাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। খুলনার ৬টি আসনে ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও সতন্ত্রসহ ৬০ জন।
এদিকে, জোটে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। এরই মধ্যে খুলনা-১ ও ৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার না হলে তারা আলাদাভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি জোট খুলনার অধিকাংশ আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়ে কৌশলগত অবস্থান নিলেও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। খুলনা-৩, ৪, ৫ ও ৬ আসনে বিএনপির মোট নয়জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। একই সাথে খুলনা-৫ ও ৬ আসনে বিএনপির ব্যানারে রয়েছে জোটের শরিক জামায়াতের প্রার্থী। ফলে শেষ পর্যন্ত কে জোটের প্রার্থী হবেন এ নিয়ে রয়েছে টানাপোড়েন।
জানা যায়, খুলনার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ছয়জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে খুলনা-১ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রার্থী দিয়েছে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান এমপি পঞ্চানন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন জাপা'র প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন জেলা জাপা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু।
এদিকে, খুলনা- ৬ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়ে অন্তঃদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। কেন্দ্রের সাথে লবিং করে প্র্রার্থী হতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি নেতা শফিকুল ইসলাম মধু এবং পাইকগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর। নিজেদের যোগ্য দাবি করে তারা দু'জনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই দুই প্রার্থীকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
অপরদিকে, খুলনার ৬টি আসনেই প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তবে ৬টি আসনের তিনটিতে একাধিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। অন্য তিন আসনে একক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। একইসাথে দুটি আসনে জামায়াত ও একটি আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি প্রদান করা হয়েছে। এককভাবে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন খুলনা-১, ২ ও ৬ আসনে মনোনীতরা। খুলনা-১ আসনে জেলা সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, খুলনা-২ আসনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও খুলনা-৬ আসনে জেলা সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা এককভাবে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন।
এছাড়া খুলনার বাকি আসনগুলোতে একাধিক প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। খুলনা-৩ আসনে দ্বৈতভাবে নগর কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠু ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে দ্বৈতভাবে কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ ও কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল এবং খুলনা-৫ আসনে দ্বৈতভাবে জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. গাজী আবদুল হক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমানকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে দলটি।
এছাড়া ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি প্রার্থীর সাথে খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার ও খুলনা-৬ আসনে মহানগর জামায়াতের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এবং একটি আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের একজনের নাম ঘোষণা করেছে দলটি।
এদিকে বিএনপি জোটে দলের একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়ে খুলনা নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কৌশলগত কারণে এটা করা হয়েছে। তবে প্রতীক বরাদ্দের আগেই কে নির্বাচন করবেন এটা ঠিক হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থেকেই আমরা নির্বাচন পরিচালনা করবো। আর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, খুলনায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন নেই। নির্বাচন বিধি অনুযায়ী নিবন্ধিত দলের একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ আছে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি একজনকেই দেয়া হবে এবং তিনিই দলের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।