মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের রৌদ্রদীপ্ত ডিসেম্বর মাসের ষষ্ঠ দিন আজ বৃহস্পতিবার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দিনটি ছিল স্বাধীনতাকামী জনতার জন্য খুবই
সুখের দিন। কোমল হৃদয়ের বাঙালিরা যে সময়ের প্রয়োজনে পাথর-কঠিনও হতে পারে তা জানিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। বিভিন্ন স্থানে পর্যুদস্ত হচ্ছে হানাদার বাহিনী। ঢাকা বিমানবন্দর অকেজো হওয়ায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পাইলটগণ তৃতীয় দেশের সাহায্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। এদিন দখলমুক্ত হয় বেশ কিছু জনপদ। এদিকে, ভারত এদিন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। যদিও ভারতের এ স্বীকৃতিদানের নেপথ্য কারণ ও লাভ-অলাভ নিয়ে ইতিহাস লেখকরা আজো দ্বিধাবিভক্ত।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত একাডেমির তৎকালীন পরিচালক ও সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবি আসাদ চৌধুরীর 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক গ্রন্থে ঊনিশশ' একাত্তর সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে এভাবে- নিয়াজীর নির্দেশে পাকবাহিনী বেসামাল হয়ে পড়ে। এগোনো অসম্ভব, পিছু হটা আরও অসম্ভব। ময়নামতি, জামালপুর, হিলি, চট্টগ্রামে ওরা যেভাবে ছিল সেভাবেই রয়ে গেল কিন্তু সিলেট এবং যশোরের ঘাঁটি ছেড়ে পালালো। মিত্রবাহিনী একই চেষ্টা করছে যাতে পাকবাহিনী কোথাও জড়ো হতে না পারে। এরই মধ্যে (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তুমুল করতালির মধ্যে সংসদে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করলেন। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণ বিপুলভাবে মিত্রবাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে এলেন। একজন অধ্যাপক টিনের বহর মাথায় নিয়ে গেছেন তিন মাইল, মহিলারা পর্যন্ত ব্রিজ তৈরিতে সাহায্য করেছেন। আরো কিছু দালিলিক প্রমাণে পাওয়া যায়, সেদিন ভারতের লোকসভায় দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সাথে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ সদস্যদের হর্ষধ্বনি আর 'জয় বাংলাদেশ' ধ্বনিতে ফেটে পড়ে।
আপনার কোন একাউন্ট না থাকলে রেজিষ্ট্রেশন করুন।